শুক্রবার, ২৭ মে ২০২২ ০৮:৪৬ এএম
ব্যারিস্টার নুসরত জাহান তানিয়া:
বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। বাংলাদেশের অসংখ্য সমস্যার মধ্যে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংকট আজ একটি বড় ধরনের সমস্যা হিসাবে দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশ হিসাবে সে দেশের রাখাইন রাজ্যের মুসলিম নাগরিকদের মানবিক দিক বিবেচনা করে আশ্রায় দিয়েছে। বাংলাদেশের এই মানবিক মূল্যবোধের স্বীকৃতি মূল্যায়ন বিদেশী রাষ্ট্রগুলো করলেও দীর্ঘদিন সাহায্য সহযোগিতা করেনি বা তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাবার যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। তাই মিয়ানমারের প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের সীমানায় মানবেতর জীবন যাপন করছে। পাশাপাশি বিভিন্ন সংঘাত ও অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ছে
আবার কেউ কেউ বাংলাদেশী পাসপোর্ট যোগাড় করে মানবিক কাজকে অমানবিক পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত (আইসিজে) জাতিসংঘের প্রধান বিচারিক অঙ্গ। এটি 1945 সালের জুন মাসে জাতিসংঘের সনদ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং 1945 সালের এপ্রিলে এটির কার্যক্রম শুরু হয়েছিল, আদালতের দুটি ভূমিকা রয়েছে: প্রথমত, আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে, রাষ্ট্রগুলি কর্তৃকি এর কাছে জমা দেওয়া আইনী বিরোধ নিষ্পত্তি করা (এর রায়গুলির বাধ্যবাধকতা রয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষের জন্য আপিল ছাড়াই); এবং দ্বিতীয়ত, যথাযথ অনুমোদিত জাতিসংঘের সংস্থা এবং এজেন্সি কর্তৃক প্রদত্ত আইনী প্রশ্নগুলির পরামর্শমূলক মতামত দেওয়া। জেনারেল অ্যাসেম্বলি এবং জাতিসংঘের সুরক্ষা কাউন্সিল নয় বছরের মেয়াদে নির্বাচিত ১৫ জন বিচারকের সমন্বয়ে এই আদালত গঠিত। আদালত একটি রেজিস্ট্রি দ্বারা সহায়তা করে, এর স্থায়ী প্রশাসনিক সচিবালয়, যা জাতিসংঘ সচিবালয়ের স্বাধীন।
নিপীড়নের প্রেক্ষিতে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী কক্সবাজারের পুরো অঞ্চলটির নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। সমস্যাটি মিয়ানমার তৈরি করেছিল, এবং এর সমাধান অবশ্যই মিয়ানমারের করা উচিত। তিন বছরেরও বেশি সময় অতিবাহিত হয়েছে, আফসোস, একটিও রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসন করা যায়নি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে সমস্যাটি সমাধান করার আহ্বান জানিয়েছেন। এটি বর্তমানে অসম্ভবের পথে। সংকট সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কার্যকর ভূমিকা প্রয়োজন। কক্সবাজারে শরণার্থী পূর্ণবাসন চ্যালেঞ্জের জটিলতা এর পাশাপাশি বাংলাদেশের অন্যান্য উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের চাহিদা মিটানোর জন্য আরও উন্নততর উপায় অনুসন্ধান করার প্রয়োজন রয়েছে। এই চিন্তা মাথায় রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা' ভাসান চরে রোহিঙ্গা শরনার্থীদের থাকার ব্যবস্থা করেছেন যা রোহিঙ্গা শরণার্থী ও বিশ্ববাসী দ্বারা প্রশংসিত হয়েছে।তবে রহিঙ্গাদের যেখানেই রাখা হোক না কেন তারা যেন নিজদেশে মিয়ানমার দ্রুত ফিরে যেতে পারে সে বিষয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। রোহিঙ্গাদের পুর্ণবাসনের চেয়ে প্রত্যাবাসনের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।
আমাদের জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের উন্নতির জন্য ভাল চিন্তা করার পাশাপাশি রোহিঙ্গা সমস্যাকেও কখনো অগ্রাহ্য করেননি। বিশ্বকে অবশ্যই স্বীকৃতি ও প্রশংসা করতে হবে যে জাতিগত সম্প্রদায়কে প্রত্যেকে রাষ্ট্র প্রত্যাহার করে নিয়েছে আর আমাদের নেত্রী তাকে গ্রহণ করেছেন। তাই তিনি কখনো তাদের পক্ষে খারাপ কিছু চাইবেন না। কারণ তিনি মানবতার চরম পারাকাষ্ঠা দেখিয়েছেন যা বিশ্বাবাসীকে হতবাক করেছে। তাই তাকে “মাদার অব হিউমিনিটি” পদকে ভূষিত করা হয়েছে।
১৯৮২ সালে মিয়ানমারের নাগরিক আইন প্রণীত হওয়ার পর থেকে রোহিঙ্গারা নাগরিকত্ব অসুবিধায় পড়েছে। যাদের বেশিরভাগই ২০১৭ সালে মিয়ারমারের রাখাইন রাজ্যে অমানবিক সংহিংসতায় এক কাপড়ে সহায় সম্বলহীন অবস্থায় বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তা করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরো কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আহবান জানিয়েছেন।
বিশ্বের জনগণের পক্ষে অপ্রত্যাশিতভাবে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়াকে আইসিজে রাষ্ট্রবিহীন রোহিঙ্গা শরণার্থীর পক্ষে অবস্থান নিতে দেখা গিয়েছে। গাম্বিয়া হলো একমাত্র দেশ, যে সাহস, দক্ষতা দিয়ে মানবতার অভিযোগ এনে মিয়ানমারকে জবাবদিহি করার চেষ্টা করেছিল কিন্তু মিয়ানমারের নাগরিকত্ব আইনে নৃশংসতা। জাতিগত সংখ্যালঘুদের হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি।
2019 সালে গাম্বিয়া নিয়ে আসা মামলায় আইসিজে মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা গণহত্যা রোধে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে। 17 Rb বিচারকের একটি প্যানেল সর্বসম্মতিক্রমে শাসিত আদেশে আদালত 1948 সালের গণহত্যা কনভেনশন-এর বিধানকে বহাল রেখেছে- মিয়ারমার "রোহিঙ্গাদের অধিকারের অপূরণীয় ক্ষতি সাধন করেছে" বলে জানিয়েছে। এখানে আন্তর্জাতিক আদালত মিয়ারমারকে রোহিঙ্গা মুসলিমদের রক্ষা এবং গণহত্যার সকল ক্রিয়া রোধ করার নির্দেশ দিয়েছে। জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত স্টেট কাউন্সেলর অং সান সুকির যুক্তিতর্ক প্রত্যাখ্যান করেছে। এতে বলা হয়েছে, মিয়ারমারকে অবশ্যই ১৯৪৮ সালের গণহত্যা কনভেনশন মেনে চলতে হবে। আইসিজে-র আদেশ অস্থায়ী, তবে মিয়ারমারের সরকারকে রোহিঙ্গাদের রক্ষার জন্য জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয় এবং মামলা চলমান থাকাকালীন এবং গণহত্যার অভিযোগের সাথে সম্পর্কিত যে কোনও প্রমাণ সংরক্ষণ করতে পারে। আনুষ্ঠানিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে কয়েক বছর সময় নিতে পারে, এবং মিয়ানমার এই আদেশগুলিকে উড়িয়ে দিতে পারে না। অন্যদিকে চীন মিয়ারমারকে সমর্থন করে এবং উভয়ই একই ধর্মীয় বিশ্বাসকে লালন করে। মিয়ারমার সমস্যা ছাড়াই তাদের মুসলমানদের সাথে তারা যা কিছু তা করতে পারে কারণ চীনারা রয়েছে তাদের সাথে। চীন যদি তার ভেটো শক্তি ব্যবহার করে তবে অর্ডার কার্যকর হবে না। যারা আইন মেনে চলতে চায় না এবং যাদের শক্তিশালী রাজনৈতিক মিত্র রয়েছে, বিশেষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া ও চীন-এর ভেটো পাওয়ার রয়েছে। তাদের অনুচিত হস্তক্ষেপ থেকে রক্ষা করার জন্য আন্তর্জাতিক আইন কার্যকর করা সবচেয়ে কঠিন। তবে আন্তর্জাতিক বিচারের দৃষ্টিকোণ থেকে আইসিজে-তে গাম্বিয়ার অবস্থান এখনও গুরুত্বপূর্ণ । এই মামলাটি রাষ্ট্রগুলিকে গণহত্যার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করার নজির হিসাবে কাজ করতে পারে যা এটি তার নিজস্ব ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। উন্নত দেশগুলোর কার্যকর উদ্যোগের জন্য জাতিসংঘ চাপ দেয়া দরকার।
বর্তমানে রোহিঙ্গা শরণার্থীর পরিস্থিতি বিশ্বের অন্যতম জটিল শরণার্থী পরিস্থিতি। যা তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে অব্যাহত রয়েছে। কূটনীতিক, রাজনৈতিক নেতা এবং মানবিক এজেন্সিদের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগে থাকা রোহিঙ্গাদের সুরক্ষার জন্য তাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। অস্থায়ী ব্যবস্থা আদালত কর্তৃক আদেশিত আইনত মিয়ানমারের উপর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে, কেবলমাত্র জাতিসংঘের সুরক্ষা কাউন্সিলই তা প্রয়োগ করতে পারে। এবং চীন ও রাশিয়ার সম্ভাব্য ভেটোদের সাথে এ ঘটনার সম্ভাবনা দূরবর্তী। সুতরাং, মামলাটি পরবর্তী পর্যায়ে চলে যাওয়ার পরে এবং আদালত সামনের মাসগুলিতে মিয়ানমারের প্রতিক্রিয়াটির অপেক্ষায় রয়েছে, আইনটির জোর নিজেই কঠোরভাবে পরীক্ষা করা হবে।
আইসিজে-তে গাম্বিয়ার ঘটনা এবং আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রোহিঙ্গাদের সমর্থন বিশ্ববাসীর পক্ষে উদাহরণস্বরূপ । নিপীড়নের নিন্দা করার জন্য আপনার কাছে সামরিক শক্তি বা অর্থনৈতিক শক্তি থাকতে হবে না। আইনী বাধ্যবাধকতা এবং নৈতিক দায়িত্ব, মানবতার দৃষ্টান্ত বড় বা ছোট সমস্ত রাজ্যের জন্য বিদ্যমান।
ব্যারিস্টার নুসরত জাহান তানিয়া
প্রভাষক, সাউথইষ্ট ইউনিভারসিটি ও
পরিচালক, ইসলামি কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোং লিঃ
নাজমুল হাসান : পূর্বাঞ্চল সাংবাদিক ইউনিটি আয়োজিত মুজিব শতবর্ষ বিজয়ের সুবর্ন জয়ন্তী উদযাপন অনুষ... বিস্তারিত
মীর নাজিম উদ্দিন আহমেদ বীমা শিল্প এখন বিকাশমান। বীমা নিয়ে অতীতে অনেক নেতিবাচক কথা হলেও সেটা অনেক... বিস্তারিত
মীর নাজিম উদ্দিন আহমেদ বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে শুদ্ধাচার নী... বিস্তারিত
মুলাদী (বরিশাল) প্রতিনিধি ॥ আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবস-২০২০ এ ... বিস্তারিত
নিজস্ব প্রতিবেদক দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যবসায়ী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও যমুনা গ্রুপের চেয়ার... বিস্তারিত
নিজস্ব প্রতিবেদক: না ফেরার দেশে চলে গেলেন কিংবদন্তি লতিফুর রহমান। গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১১... বিস্তারিত
নিজস্ব প্রতিবেদক: মুগদা প্রেসক্লাব-এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো ঈদ পূর্ণমিলনী ও অলোচনা সভা। গত ১৩ মে ২০... বিস্তারিত
নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত স্বনামধন্য টেলিকম খাতের প্রতিষ্ঠান রবি আজিয়াটা লিঃ এ... বিস্তারিত
This is the kind information of all concerned that the Board of Directors of Desh General Insurance Company Limited at its meeting 140th meeting held on April 27, 2022 at 2.30 p.m. by using digital platform approved the First Quarter (Q1) Unaudited Finan... বিস্তারিত
১০ শতাংশ নগদ লভ্... বিস্তারিত